যোনা
গ্রন্থস্বত্ব
যোনা 1:1 পদটি ভাববাদী যোনাকে যোনা পুস্তকটির লেখক রূপে চিহ্নিত করে। যোনা নাসরতের নিকটবর্তী গাত-হেফোরীয়ো নামক একটি শহর থেকে এসেছিলেন, যে অঞ্চলটি পরবর্তীকালে গালিলী নামে পরিচিত হয়েছিল (2 রাজাবলি 14:25)। এটা যোনাকে ইস্রায়েলের উত্তরাঞ্চলের রাজ্যের কতিপয় ভাববাদীদের মধ্যে অন্যতম রূপে পরিগণিত করে। যোনা পুস্তকটি ঈশ্বরের ধৈর্য এবং স্নেহমমতাকে লক্ষনীয় করে, এবং তাদেরকে দিতে তাঁর ইচ্ছা পোষণ করেন যারা দ্বিতীয় সুযোগে তাঁকে অমান্য করে।
রচনার সময় এবং স্থান
আনুমাণিক 793 থেকে 450 খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়।
কাহিনীটি ইস্রায়েলে শুরু হয়, এবং যাফোতের মহাসমুদ্রের বন্দরের অভিমুখে অগ্রসর হয়, এবং ণীনবীতে গিয়ে শেষ হয়, যা তাইগ্রিস নদীর তীরে অশুরিয়ান সাম্রাজ্যের রাজধানী নগর হচ্ছে।
গ্রাহক
যোনা পুস্তকটির শোতৃবৃন্দ ছিল ইস্রায়েলের লোকেরা এবং বাইবেলের সমস্ত ভবিষ্যত পাঠকগণ।
উদ্দেশ্য
অনাজ্ঞাকারিতা এবং পুনর্জাগরণ এই পুস্তকটির দুটি মুখ্য বিষয় হচ্ছে। বৃহৎ মত্স্য তিমির উদরের মধ্যে যোনার অভিজ্ঞতা তাকে অভূতপূর্ব উদ্ধারের অন্বেষণ করতে এক অদ্ভূত সুযোগ এনে দেয়, যেমনি সে অনুতাপ করে। তার প্রারম্ভিক অবাধ্যতা না কেবল তাকে তার ব্যক্তিগত পুনর্জাগরণের দিকে নিয়ে যায় বরং নীনবী নিবাসীদের প্রতিও তা ঘটে। সমগ্র বিশ্বের জন্য ঈশ্বরের বার্তা হলো, না কেবল লোকেদের আমরা পছন্দ করি অথবা তাদেরকেও যারা আমাদের নিকট অনুরূপ হচ্ছে। ঈশ্বর প্রকৃত অনুতাপ চান। তিনি আমাদের হৃদয় এবং প্রকৃত অনুভূতি নিয়ে চিন্তিত, না কেবল ভালো কাজগুলোকে নিয়ে যা অন্যদের প্রভাবিত করে।
বিষয়
সকল লোকেদের ক্ষেত্রে ঈশ্বরের অনুগ্রহ
রূপরেখা
1. যোনার অনাজ্ঞাকারিতা — 1:1-14
2. এক বৃহৎ মত্স্য দ্বারা যোনার গলাধ:করণ — 1:15, 16
3. যোনার অনুতাপ — 1:17-2:10
4. নীনবীতে যোনা প্রচার করেন — 3:1-10
5. ঈশ্বরের অনুকম্পাতে যোনা ক্রুদ্ধ হন — 4:1-11
সদাপ্রভুর থেকে যোনার পলায়ন।
1
সদাপ্রভুর এই বাক্য অমিত্তয়ের ছেলে যোনার কাছে উপস্থিত হল, “তুমি ওঠ, নীনবীতে, সেই মহানগরে যাও, আর নগরের বিরুদ্ধে ঘোষণা কর, কারণ তাদের দুষ্টতা আমার সামনে প্রকাশিত হয়েছে।” কিন্তু যোনা সদাপ্রভুর সামনে থেকে তর্শীশে পালাবার জন্য উঠলেন; তিনি যাফোতে নেমে গিয়ে, তর্শীশে যাবে এমন এক জাহাজ পেলেন; তখন জাহাজের ভাড়া দিয়ে সদাপ্রভুর সামনে থেকে নাবিকদের সঙ্গে তর্শীশে যাবার জন্য সেই জাহাজে প্রবেশ করলেন। কিন্তু সদাপ্রভু সমুদ্রে প্রচন্ড ঝড়ো বায়ু পাঠিয়ে দিলেন, সমুদ্রে ভীষণ ঝড় উঠল, এমন কি, জাহাজ ভেঙে যাবার মত হল। তখন নাবিকেরা ভয় পেল, প্রত্যেকে নিজের নিজের দেবতার কাছে কাঁদতে লাগল, আর ওজন কমানোর জন্য জাহাজের মাল সমুদ্রে ফেলে দিল। কিন্তু যোনা জাহাজের তলায় নেমেছিলেন এবং এমন ঘুমিয়ে ছিলেন যে গভীর ঘুমে মগ্ন ছিলেন। তখন জাহাজের মালিক তাঁর কাছে এসে বললেন, “ওহে, তুমি যে ঘুমাচ্ছ তোমার কি হল? ওঠ, তোমার দেবতাকে ডাক; হয় তো দেবতা আমাদের বিষয়ে চিন্তা করবেন ও আমরা বিনষ্ট হব না।” পরে নাবিকেরা একে অপরকে বলল, “এস, আমরা গুলিবাঁট করি, তাহলে জানতে পারবে কার দোষে আমাদের প্রতি এই অমঙ্গল ঘটছে? পরে তারা গুলিবাঁট করল, আর যোনার নামে গুলি উঠল।” তখন তারা তাকে বলল, “বল দেখি, কার দোষে আমাদের প্রতি এই অমঙ্গল ঘটছে? তোমার পেশা কি? কোন জায়গা থেকে এসেছ? তুমি কোন দেশের লোক? কোন জাতি?” তিনি তাদেরকে বললেন, “আমি ইব্রীয়; আমি সদাপ্রভুকে ভয় করি, তিনি স্বর্গের ঈশ্বর, তিনি সমুদ্র ও শুকনো ভূমি সৃষ্টি করেছেন।” 10 তখন সেই লোকেরা খুব ভয় পেয়ে তাঁকে বলল, “তুমি এ কি কাজ করেছ?” কারণ তিনি যে সদাপ্রভুর সামনে থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন, এটা তারা জানত, কারণ তিনি তাদেরকে বলেছিলেন। 11 পরে তারা তাঁকে বলল, “আমরা তোমাকে কি করলে সমুদ্র আমাদের প্রতি শান্ত হতে পারে?” কারণ সমুদ্র তখন আরো ভয়াবহ হয়ে উঠছিল। 12 তিনি তাদেরকে বললেন, “আমাকে ধরে সমুদ্রে ফেলে দাও, তাতে সমুদ্র তোমাদের জন্য শান্ত হবে; কারণ আমি জানি, আমারই দোষে তোমাদের উপরে এই ভীষণ ঝড় এসেছে।” 13 তবুও সেই লোকেরা জাহাজ ফিরিয়ে ডাঙায় নিয়ে যাবার জন্য ঢেউ কাটতে চেষ্টা করল; কিন্তু পারল না, কারণ সমুদ্র তাদের বিপরীতে আরো ভয়াবহ হয়ে উঠছিল। 14 এই জন্য তারা সদাপ্রভুকে ডাকতে লাগল আর বলল, “অনুরোধ করি, হে সদাপ্রভু, অনুরোধ করি, এই ব্যক্তির প্রাণের জন্য আমাদের বিনাশ না হোক এবং আমাদের উপরে নির্দোষের রক্তের ভাগীদার কর না; কারণ, হে সদাপ্রভু, তুমি নিজের ইচ্ছামতো কাজ করেছ।” 15 পরে তারা যোনাকে ধরে সমুদ্রে ফেলে দিল, তাতে সমুদ্র থামল, আর ভয়াবহ হল না। 16 তখন সেই লোকেরা সদাপ্রভুর থেকে খুব ভয় পেল; আর তারা সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে বলিদান করল এবং নানা মানত করল। 17 আর সদাপ্রভু যোনাকে গিলে ফেলার জন্য একটা বড় মাছ ঠিক করে রেখেছিলেন; সেই মাছের পেটে যোনা তিন দিন ও তিন রাত কাটালেন।