প্রকাশিত বাক্য
গ্রন্থস্বত্ব
প্রেরিত যোহন নিজেকে এমন একজন বলে অভিহিত করেন যাকে প্রভু দ্বর্গদূতের মাধ্যমে যা বলেছিলেন তিনি তাই লিখেছিলেন। আদিতম মণ্ডলীর লেখক সমূহ যেমন জাস্টিন মার্টির, ইরেনাস, হিপ্পোলিটাস, তেরতুল্লিয়ান, আলেক্সেন্দ্রিয়ার ক্লেমেন্ট এবং মুরিটোরিয়ান সকলে প্রেরিত যোহনকে প্রকাশিত পুস্তকের লেখক রূপে কৃতিত্ব দিয়েছেন। প্রকাশিত বাক্য যিহুদী সাহিত্যের একপ্রকার “রহস্য-উন্মোচক” স্বরূপের মধ্যে লেখা হয়েছে যা আশাকে জাগাতে প্রতীকাত্মক চিত্রকে ব্যবহার করে (ঈশ্বরের চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্যে) তাদের প্রতি যারা তাড়নার মধ্যে আছে।
রচনার সময় এবং স্থান
আনুমাণিক 95 থেকে 96 খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়।
যোহন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে যখন তিনি ভাববাণী পেয়েছিলেন, তখন তিনি এজিয়ান সাগরস্থ পাটমস নামক একটি দ্বীপে ছিলেন (1:9)।
গ্রাহক
সমূহ যোহন বলেছেন যে এশিয়ার সাতটি মণ্ডলীর উদ্দেশ্যে ভাববাণী করা হয়েছিল (1:4)।
উদ্দেশ্য
প্রকাশিত বাক্যের কথিত উদ্দেশ্য হচ্ছে যীশু খ্রীষ্টকে প্রকাশ করা (1:1), তাঁর ব্যক্তিত্ব, তাঁর পরাক্রমকে এবং তাঁর দাসগণকে দেখানো যে শীঘ্রই কি ঘটতে চলেছে। এটা হচ্ছে চূড়ান্ত সাবধান বাণী যে নিশ্চিতরূপে পৃথিবীর শেষ দিন উপস্থিত হবে এবং বিচার সুনিশ্চিত হবে। এটা আমাদেরকে স্বর্গের একটি ক্ষুদ্র আভাস দেয় এবং প্রতাপের সমস্ত মহিমাকে যা তাদের জন্য অপেক্ষা করছে যাদের পোশাক শুভ্র হচ্ছে। প্রকাশিত বাক্য আমাদেরকে ভয়ঙ্কর বিপত্তির মধ্য দিয়ে নিয়ে যায় এর সমস্ত পীড়া ও চূড়ান্ত অগ্নির সাথে যাকে সমস্ত অবিশ্বাসীরা অনন্তকাল ধরে ভোগ করবে। পুস্তকটি শয়তানের পতন তথা বিনাশের পুনরাবৃত্তি করে যার জন্য সে এবং তার দূতগণ ভোগ করতে বাধ্য হয়।
বিষয়
প্রকাশ করা
রূপরেখা
1. খ্রীষ্টের প্রকাশন এবং যীশুর স্বাক্ষ্য — 1:1-8
2. যে জিনিস তুমি দেখেছ — 1:9-20
3. সাত স্থানীয় মণ্ডলী — 2:1-3:22
4. যে জিনিসগুলো ঘটতে চলেছে — 4:1-22:5
5. প্রভুর শেষ সাবধানবাণী এবং প্রেরিতের শেষ প্রার্থনা — 22:6-21
1
শুভেচ্ছা, স্বর্গে যীশুর দর্শন
যীশু খ্রীষ্টের প্রকাশিত বাক্য হল ঈশ্বর তাঁকে দেখিয়েছিলেন যা কিছুদিনের মধ্যে ঘটবে। যীশু খ্রীষ্ট নিজের দূত পাঠিয়ে ঈশ্বরের দাস যোহনকে এই সব বিষয় জানিয়েছিলেন। ঈশ্বরের বাক্য ও যীশু খ্রীষ্টের সাক্ষ্য সম্বন্ধে যোহন যা দেখেছিলেন, সেই সব বিষয়েই তিনি এখানে সাক্ষ্য দিয়েছেন। যে এই ভাববাণীর বাক্য সব পড়ে সে ধন্য এবং যারা তা শোনে এবং পালন করে তারাও ধন্য; কারণ দিন কাছে এসে গেছে।
শুভেচ্ছা এবং ঈশ্বরের মহিমাজ্ঞাপক শব্দসমূহ।
এশিয়া প্রদেশের সাতটি মণ্ডলীর কাছে যোহন লিখছেন: যিনি আছেন, ও যিনি ছিলেন, ও যিনি আসছেন, তাঁর কাছ থেকে এবং তাঁর সিংহাসনের সামনে যে সাতটি আত্মা আছে, সেই যীশু খ্রীষ্ট থেকে অনুগ্রহ ও শান্তি বর্তুক, এবং যীশু খ্রীষ্ট, যিনি বিশ্বস্ত সাক্ষী, মৃত্যু থেকে তিনিই প্রথমে জীবিত হয়ে উঠেছিলেন এবং তিনি পৃথিবীর রাজাদের তত্ত্বাবধায়ক। তিনি আমাদের ভালবাসেন এবং নিজের রক্ত দিয়ে পাপ থেকে আমাদের মুক্ত করেছেন। তিনি আমাদের নিয়ে একটা রাজ্য গড়ে তুলেছেন এবং তাঁর পিতা ও ঈশ্বরের সেবার জন্য যাজক করেছেন, চিরকাল ধরে তাঁর মহিমা ও আধিপত্য হোক। আমেন। দেখ, তিনি মেঘের সঙ্গে; প্রতিটি চোখ তাঁকে দেখবে, যারা তাঁকে বিদ্ধ করেছিল তারাও দেখবে। এবং পৃথিবীর সমস্ত জাতি তাঁর জন্য দুঃখ করবে। হ্যাঁ, আমেন। প্রভু ঈশ্বর বলেছেন, “আমি আদি এবং অন্ত,” “যিনি আছেন ও যিনি ছিলেন, ও যিনি আসছেন, আমিই সর্বশক্তিমান।”
মনুষ্যপুত্রের মতো।
আমি, তোমাদের ভাই যোহন এবং যীশুর সাথে যুক্ত হয়ে আমি তোমাদের সাথে একই কষ্ট, একই রাজ্য এবং একই ধৈর্য্যের সহভাগী হয়ে ঈশ্বরের বাক্য ও যীশুর সাক্ষ্য প্রচার করেছিলাম বলে আমাকে পাটম দ্বীপে নিয়ে রাখা হয়েছিল। 10 আমি প্রভুর দিনের আত্মার বশে ছিলাম। আমার পিছনে তূরীর শব্দের মত এক উচ্চস্বর শুনলাম। 11 কেউ বললেন, তুমি যা দেখছো, তা একটা বইতে লেখ এবং ইফিষীয়, স্মুর্ণা, পর্গাম, থুয়াতীরা, সার্দ্দি, ফিলাদিলফিয়া ও লায়দিকেয়া, এই সাতটি শহরের সাতটি মণ্ডলীর কাছে পাঠিয়ে দাও। 12 যিনি কথা বলছিলেন তাঁকে দেখবার জন্য আমি ঘুরে দাঁড়ালাম, মুখ ফিরিয়ে দেখলাম, 13 সাতটি সোনার বাতিস্তম্ভ আছে ও সেই সব দীপাধারের মাঝখানে মনুষ্যপুত্রের মতো একজন লোক দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁর পরনে পা পর্যন্ত লম্বা পোষাক ছিল, এবং তাঁর বুকে সোনার বেল্ট বাঁধা ছিল। 14 তাঁর মাথার চুল মেষের লোমের মত ও বরফের মতো সাদা ছিল, 15 এবং তাঁর চোখ আগুনের শিখার মতো ছিল। তাঁর পা ছিল আগুনে পুড়িয়ে পরিষ্কার করা, পালিশ করা পিতলের মতো এবং তাঁর গলার স্বর ছিল জোরে বয়ে যাওয়া স্রোতের আওয়াজের মতো। 16 তিনি তাঁর ডান হাতে সাতটি তারা ধরে ছিলেন এবং তাঁর মুখ থেকে ধারালো দুই দিকে ধারওয়ালা তরোয়ালের মত বেরিয়ে আসছিল। পূর্ণ তেজে জ্বলন্ত সূর্য্যের মতই তাঁর মুখের চেহারা ছিল। 17 যখন আমি তাঁকে দেখলাম, তখন একজন মৃত মানুষের মতো তাঁর পায়ে পড়ে গেলাম, তখন তিনি তাঁর ডান হাত আমার উপরে রেখে বললেন, “ভয় পেওনা, আমিই প্রথম ও শেষ, আমিই চির জীবন্ত।” 18  আমি মরেছিলাম, কিন্তু দেখ, আমি যুগে যুগে জীবিত আছি; আর মৃত্যু ও নরকের চাবি আমার হাতে আছে। 19  অতএব তুমি যা দেখলে এবং যা এখন ঘটছে, ও এসবের পরে যা ঘটবে, সেই সব লিখে রাখ। 20  আমার ডান হাতে যে সাতটি তারা এবং সাতটি সোনার দীপাধার দেখলে, তার গোপন মানে এই সেই সাতটি তারা সেই সাতটি মণ্ডলীর দূত এবং সেই সাতটি দীপাধার হলো সাতটি মণ্ডলী।