যিহূদা
গ্রন্থস্বত্ব
লেখক নিজেকে যিহূদা বলে পরিচিত করেন, “যিনি যীশু খ্রীষ্টের দাস এবং যাকোবের ভ্রাতা হচ্ছেন” (1:1)। যিহূদা সম্ভবত “যুদাস” ছিলেন যার নাম যোহন 14:22 পদে করা হয়েছে তার অন্যতম একজন প্রেরিত রূপে। তাকে সাধারনভাবে যীশুর ভ্রাতা রূপেও চিন্তা করা হয়ে থাকে। তিনি পূর্বে একজন অবিশ্বাসী ছিলেন (যোহন 7:5), তথাপি পরবর্তীকালে যীশুর আরোহণের পরে তিনি তার মাতা এবং অন্য শিষ্যগণের সাথে উপরের কুঠরীতে আবির্ভূত হলেন (প্রেরিত 1:14)
রচনার সময় এবং তারিখ
আনুমাণিক খ্রীষ্টাব্দ 60 থেকে 80 এর মধ্যবর্তী দিন। স্থানের অনুমান, যেখানে যিহূদা লেখা গিয়েছিল তা আলেক্সান্দ্রিয়া থেক রোমের দূরত্বের মধ্যে হবে।
গ্রাহক
সাধারণ বাগধারা, “তাদেরকে যারা ঈশ্বর পিতার দ্বারা শুচিকৃত হয় এবং যীশু খ্রীষ্টতে সংরক্ষিত হয়, এবং আহ্বান করা হয়,” হতে পারে সমস্ত খ্রীষ্টানদের প্রতি উল্লেখ করা হতো; তথাপি, মিথ্যা শিক্ষকদের প্রতি তার বার্তাকে পরীক্ষা করে তিনি কোনো একটি নিশ্চিত গোষ্ঠীর পরিবর্তে সমস্ত মিথ্যা শিক্ষকদেরকে সম্বোধিত করে থাকতে পারেন।
উদ্দেশ্য
যিহূদা একটি প্রচেষ্টার মধ্যে মণ্ডলীকে বিশ্বাসের মধ্যে প্রবল থাকতে এবং বিধর্মের বিরোধিতা করতে নিরন্তর সতর্ক প্রহরা রাখার প্রয়োজনের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে এই পত্রটি লিখেছিলেন। তিনি খ্রীষ্টানদের সর্বত্র কার্য করার জন্য অনুপ্রাণিত করতে লিখেছিলেন। তিনি তাদের চেয়েছিলেন মিথ্যা শিক্ষার বিপদকে চিনতে, নিজেদেরকে এবং অন্য বিশ্বাসীদের সুরক্ষিত করতে, এবং তাদের ফিরে পেতে যারা আগেই প্রবঞ্চিত হয়েছে। যিহূদা ঈশ্বরহীন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে লিখছিলেন যারা বলছিল যে ঈশ্বরের দন্ডের ভয় ছাড়া খ্রীষ্টানরা নিজের খুশিমতন কাজ করতে পারে।
বিষয়
বিশ্বাসের জন্য লড়াই করা
রূপরেখা
1. ভূমিকা — 1:1, 2
2. মিথ্যা শিক্ষা দানকারীদের বর্ণনা এবং অদৃষ্ট — 1:3-16
3. খ্রীষ্টের মধ্যে বিশ্বাসীদের উত্সাহপ্রদান — 1:17-25
1
বিশ্বাসের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করার জন্য উপদেশ।
যিহূদা, যীশু খ্রীষ্টের প্রিয় দাস এবং যাকোবের ভাই, যাদের পিতা ঈশ্বর ভালবাসেন ও যীশু খ্রীষ্টের জন্য রেখেছেন, তাদের জন্য এই চিঠি লিখছি। দয়া, শান্তি, ও ভালবাসা প্রচুররূপে তোমাদের উপর আসুক।
অবিশ্বাসীদের পাপ এবং নিয়তি।
প্রিয়, বন্ধুরা, আমাদের সাধারণ পরিত্রানের বিষয়ে তোমাদেরকে কিছু লিখতে আমি আগ্রহী ছিলাম, পবিত্র লোকদের কাছে একবারে দৃঢ়ভাবে সমর্পিত বিশ্বাসের জন্য প্রাণপণে চেষ্টা কর, সেই উত্সাহ তোমাদেরকে দেবার জন্য আমার রচনার প্রয়োজন। যেহেতু এমন কয়েক জন চুপি-চুপি প্রবেশ করেছে, যারা এই শাস্তির যোগ্য তাদের বিষয়ে পবিত্র শাস্ত্রে আগেই লেখা হয়েছিল; তাদের ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি নেই, আমাদের ঈশ্বরের অনুগ্রহ তুচ্ছ করে এবং আমাদের একমাত্র অধিপতি ও প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে অস্বীকার করে।
ভণ্ড শিক্ষকদের থেকে সাবধান।
কিন্তু যদিও তোমরা সবই একবারে জেনে নিয়েছ, তা সত্বেও আমার ইচ্ছা এই, যেন তোমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিই যে, প্রভু মিশর দেশ থেকে প্রজাদেরকে উদ্ধার করে যারা বিশ্বাস করে নি পরে তাদের বিনষ্ট করেছিলেন। আর যে স্বর্গ দূতেরা নিজেদের আধিপত্য রক্ষা না করে নিজ বাসস্থান ত্যাগ করেছিল, তাদেরকে তিনি মহাদিনের বিচারের জন্য ঘোর অন্ধকারের মধ্যে অনন্তকালের শিঁকলে বেঁধে রেখেছেন। সেইভাবে সদোম ও ঘমোরা এবং তার আশেপাশের শহর সব এদের মতো অত্যন্ত ব্যাভিচারগ্রস্ত এবং বিজাতীও মাংসিক চেষ্টায় বিপথগামী, তারা অনন্ত আগুনে পুড়বার শাস্তি পাবে, তাদের নমুনা রয়েছে। তা সত্বেও এরাও সেইভাবে স্বপ্ন দেখতে দেখতে নিজের দেহকে অপবিত্র করে, কর্তৃত্ব অমান্য করে, যারা গৌরবের পাত্র সেই স্বর্গদূতকে নিন্দা করে। কিন্তু প্রধান স্বর্গদূত মীখায়েল যখন মোশির মৃতদেহের বিষয়ে দিয়াবলের সাথে তর্ক বিতর্ক করলেন, তখন স্বর্গদূতকে নিন্দা করে দোষী করতে সাহস করলেন না, কিন্তু বললেন, “প্রভু তোমাকে ধমক দিন।” 10 কিন্তু এরা না বুঝে স্বর্গদূতকে নিন্দা করে; এবং বুদ্ধিবিহীন পশুদের মত যা স্বভাবতঃ জানে, তাতেই নষ্ট হয়। 11 ধিক তাদেরকে! কারণ তারা কয়িনের পথে চলে গিয়েছে এবং টাকার লোভে বিলিয়মের ভুল পথে গিয়ে পড়েছে এবং কোরহের প্রতিবাদে বিনষ্ট হয়েছে। 12 তারা তোমাদের সাথে খাবার খাওয়ার দিনের তোমাদের প্রীতিভোজে ব্যাঘাত সৃষ্টিকারীর মত, তারা এমন পালক যে নির্ভয়ে নিজেদেরকে চালায়; তারা বাতাসে ভাসমান নির্জল মেঘ; হেমন্তকালের ফলহীন, দুই বার মৃত ও নির্মূল গাছ; 13 তারা নিজ লজ্জারূপ ফেনা বের করার মত প্রচন্ড সামুদ্রিক তরঙ্গের মত; ভ্রমণকারী তারা, যাদের জন্য অনন্তকালের ঘোরতর অন্ধকার অপেক্ষা করছে। 14 আর আদম পর্যন্ত সাত পুরুষ যে হনোক, তিনিও এই লোকদের উদ্দেশ্যে এই ভাববাণী বলেছিলেন “দেখ, প্রভু নিজের দশ হাজার পবিত্র দূতদের সাথে আসলেন, যেন সবার বিচার করেন; 15 আর ভক্তিহীন সবাই নিজেদের যে সব ভক্তিবিরুদ্ধ কাজের মাধ্যমে ভক্তিহীনতা দেখিয়েছে এবং ভক্তিহীন পাপীরা তাঁর বিরুদ্ধে যে সব কঠোর কথা বলেছে তার জন্য তাদেরকে যেন ভর্ত্সনা করেন।” 16 এরা বচসাকারী, নিজের নিজের ভাগ্যকে দোষ দেয় ও খারাপ কামনা-বাসনার অনুগামী; আর তাদের মুখ মহাগর্বের কথা বলে এবং তারা লাভের জন্য মানুষদের পক্ষপাত করে।
সম্পূর্ণ ও অনন্ত পরিত্রান যীশুতে প্রাপ্য।
17 কিন্তু, প্রিয় বন্ধুরা, এর আগে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের প্রেরিতরা যে সব কথা বলেছেন, তোমরা সে সব মনে কর; 18 তাঁরা ত তোমাদেরকে বলতেন, শেষ দিনের, উপহাসকারীরা উপস্থিত হবে, তারা নিজের নিজের ভক্তিবিরুদ্ধ অভিলাষ অনুসারে চলবে। 19 ওরা দলভেদকারী, প্রাণিক, আত্মাবিহীন। 20 কিন্তু, প্রিয় বন্ধুরা, তোমরা নিজেদের পরম পবিত্র শাস্ত্রের উপরে নিজেদেরকে গেঁথে তুলতে তুলতে, পবিত্র আত্মাতে প্রার্থনা করতে করতে, 21 ঈশ্বরের ভালবাসায় নিজেদেরকে রক্ষা কর এবং অনন্ত জীবনের জন্য আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দয়ার অপেক্ষায় থাক। 22 আর কিছু লোকের প্রতি, যারা কোন শিক্ষায় বিশ্বাস করা উচিত সে বিষয়ে সন্দেহ করে তাদের প্রতি দয়া কর, 23 আগুন থেকে টেনে নিয়ে রক্ষা কর; আর কিছু লোকের প্রতি সভয়ে দয়া কর; দেহের মাধ্যমে কলঙ্কিত জামা-কাপড়ও ঘৃণা কর।
ঈশ্বরের মহিমাজ্ঞাপক শব্দসমূহ।
24 আর যিনি তোমাদেরকে হোঁচট খাওয়া থেকে রক্ষা করতে এবং নিজের মহিমার উপস্থিতির সামনে নির্দোষ অবস্থায় আনন্দে উপস্থিত থাকতে পারেন, 25 যিনি একমাত্র ঈশ্বর আমাদের উদ্ধারকর্তা, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে তাঁরই উপস্স্থিতি, মহিমা, পরাক্রম ও কর্তৃত্ব হোক, আর এখন এবং চিরকাল হোক। আমেন।