যোহন লিখিত সুসমাচার
1
আদিতে বাক্য ছিলেন, সেই বাক্য ঈশ্বরের সঙ্গে ছিলেন এবং বাক্যই ঈশ্বর ছিলেন। আদিতে তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে ছিলেন। তাঁর মাধ্যমে সবকিছু সৃষ্ট হয়েছিল; সৃষ্ট কোনো বস্তুই তিনি ব্যতিরেকে সৃষ্ট হয়নি। তাঁর মধ্যে জীবন ছিল। সেই জীবন ছিল মানবজাতির জ্যোতি। সেই জ্যোতি অন্ধকারে আলো বিকিরণ করে, কিন্তু অন্ধকার তা উপলব্ধি* করতে পারেনি।
ঈশ্বর থেকে প্রেরিত এক ব্যক্তির আবির্ভাব হল, তাঁর নাম যোহন। সেই জ্যোতির সাক্ষ্য দিতেই সাক্ষীরূপে তাঁর আগমন ঘটেছিল, যেন তাঁর মাধ্যমে মানুষ বিশ্বাস করে। তিনি স্বয়ং সেই জ্যোতি ছিলেন না, কিন্তু সেই জ্যোতির সাক্ষ্য দিতেই তাঁর আবির্ভাব হয়েছিল।
সেই প্রকৃত জ্যোতি, যিনি প্রত্যেক মানুষকে আলো দান করেন, জগতে তাঁর আবির্ভাব হচ্ছিল। 10 তিনি জগতে ছিলেন, জগৎ তাঁর দ্বারা সৃষ্ট হলেও জগৎ তাঁকে চিনল না। 11 তিনি তাঁর আপনজনদের মধ্যে এলেন, কিন্তু যারা তাঁর আপন, তারা তাঁকে গ্রহণ করল না। 12 তবু যতজন তাঁকে গ্রহণ করল, যারা তাঁর নামে বিশ্বাস করল, তাদের তিনি ঈশ্বরের সন্তান হওয়ার অধিকার দিলেন। 13 তারা স্বাভাবিকভাবে জাত নয়, মানবিক ইচ্ছা বা পুরুষের ইচ্ছায় নয়, কিন্তু ঈশ্বর থেকে জাত।
14 সেই বাক্য দেহ ধারণ করলেন এবং আমাদেরই মধ্যে বসবাস করলেন। আমরা তাঁর মহিমা দেখেছি, ঠিক যেমন পিতার নিকট থেকে আগত এক ও অদ্বিতীয়§ পুত্রের মহিমা। তিনি অনুগ্রহ ও সত্যে পূর্ণ।
15 যোহন তাঁর বিষয়ে সাক্ষ্য দিলেন। তিনি উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করলেন, “ইনিই সেই ব্যক্তি যাঁর সম্পর্কে আমি বলেছিলাম, ‘আমার পরে যিনি আসছেন তিনি আমার অগ্রগণ্য, কারণ আমার আগে থেকেই তিনি বিদ্যমান।’ ” 16 তাঁর অনুগ্রহের পূর্ণতা থেকে আমরা সকলেই একের পর এক আশীর্বাদ লাভ করেছি। 17 মোশির মাধ্যমে বিধান দেওয়া হয়েছিল; যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে অনুগ্রহ ও সত্য উপস্থিত হয়েছে। 18 ঈশ্বরকে কেউ কোনোদিন দেখেনি; কিন্তু এক ও অদ্বিতীয়* ঈশ্বর, যিনি পিতার পাশে বিরাজ করেন, তিনিই তাঁকে প্রকাশ করেছেন।
বাপ্তিষ্মদাতা যোহন অস্বীকার করলেন যে তিনি খ্রীষ্ট
19 জেরুশালেমে ইহুদিরা যখন কয়েকজন যাজক ও লেবীয়কে পাঠিয়ে তাঁর পরিচয় জানতে চাইল, তখন যোহন এভাবে সাক্ষ্য দিলেন। 20 তিনি স্বীকার করতে দ্বিধাবোধ করলেন না বরং মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করলেন, “আমি সেই খ্রীষ্ট নই।”
21 তারা তাঁকে প্রশ্ন করল, “তাহলে আপনি কে? আপনি কি এলিয়?”
তিনি বললেন, “না, আমি নই।”
“আপনি কি সেই ভাববাদী?”
তিনি বললেন, “না।”
22 শেষে তারা বলল, “তাহলে, কে আপনি? আমাদের বলুন। যারা আমাদের পাঠিয়েছেন, তাদের কাছে উত্তর নিয়ে যেতে হবে। নিজের সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?”
23 ভাববাদী যিশাইয়ের ভাষায় যোহন উত্তর দিলেন, “আমি মরুপ্রান্তরে এক কণ্ঠস্বর যা আহ্বান করছে, ‘তোমরা প্রভুর জন্য রাজপথগুলি সরল করো।’ ”§
24 তখন ফরিশীদের প্রেরিত কয়েকজন লোক 25 তাঁকে প্রশ্ন করল, “আপনি যদি খ্রীষ্ট, এলিয়, বা সেই ভাববাদী না হন, তাহলে বাপ্তিষ্ম দিচ্ছেন কেন?”
26 যোহন উত্তর দিলেন, “আমি তোমাদের জলে বাপ্তিষ্ম দিচ্ছি ঠিকই, কিন্তু তোমাদেরই মধ্যে এমন একজন দাঁড়িয়ে আছেন, যাঁকে তোমরা জানো না। 27 তিনি আমার পরে আসছেন। তাঁর চটিজুতোর বাঁধন খোলারও যোগ্যতা আমার নেই।”
28 এই সমস্ত ঘটল জর্ডন নদীর অপর পারে বেথানিতে, যেখানে যোহন লোকেদের বাপ্তিষ্ম দিচ্ছিলেন।
যোহন যীশুর বিষয়ে সাক্ষ্য দিলেন
29 পরের দিন যোহন যীশুকে তাঁর দিকে এগিয়ে আসতে দেখে বললেন, “ওই দেখো ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের সমস্ত পাপ দূর করেন। 30 ইনিই সেই ব্যক্তি, যাঁর সম্পর্কে আমি বলেছিলাম ‘আমার পরে যিনি আসছেন তিনি আমার চেয়েও মহান, কারণ আমার আগে থেকেই তিনি বিদ্যমান আছেন।’ 31 আমি নিজে তাঁকে জানতাম না, কিন্তু তিনি যেন ইস্রায়েলের কাছে প্রকাশিত হন সেজন্যই আমি জলে বাপ্তিষ্ম দিতে এসেছি।”
32 তারপর যোহন এই সাক্ষ্য দিলেন: “আমি পবিত্র আত্মাকে কপোতের মতো স্বর্গ থেকে নেমে আসতে দেখলাম, তিনি তাঁর উপরে অধিষ্ঠান করলেন। 33 আমি তাঁকে চিনতাম না কিন্তু যিনি আমাকে জলে বাপ্তিষ্ম দিতে পাঠিয়েছেন তিনি বলেছিলেন, ‘আত্মাকে যাঁর উপরে নেমে এসে অধিষ্ঠান করতে দেখবে তিনিই পবিত্র আত্মায় বাপ্তিষ্ম দেবেন।’ 34 আমি দেখেছি ও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, ইনিই ঈশ্বরের পুত্র।”
যীশুর প্রথম শিষ্যদল
35 পরের দিন যোহন তাঁর দুজন শিষ্যের সঙ্গে আবার সেখানে উপস্থিত ছিলেন। 36 সেখান দিয়ে যীশুকে যেতে দেখে তিনি বললেন, “ওই দেখো ঈশ্বরের মেষশাবক।”
37 তাঁর একথা শুনে শিষ্য দুজন যীশুকে অনুসরণ করলেন। 38 তাঁদের অনুসরণ করতে দেখে যীশু ঘুরে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কী চাও?”
তাঁরা বললেন, “রব্বি, (এর অর্থ, গুরুমহাশয়) আপনি কোথায় থাকেন?”
39 “এসো,” তিনি উত্তর দিলেন, “আর তোমরা দেখতে পাবে।”
অতএব, তাঁরা গিয়ে দেখলেন তিনি কোথায় থাকেন এবং তাঁরা সেদিন তাঁর সঙ্গেই থাকলেন। তখন সময় ছিল বেলা প্রায় চারটা।
40 যোহনের কথা শুনে যে দুজন যীশুকে অনুসরণ করেছিলেন, শিমোন পিতরের ভাই আন্দ্রিয় ছিলেন তাদের অন্যতম। 41 আন্দ্রিয় প্রথমে তাঁর ভাই শিমোনের খোঁজ করলেন এবং তাঁকে বললেন, “আমরা মশীহের (অর্থাৎ খ্রীষ্টের) সন্ধান পেয়েছি।” 42 তিনি তাঁকে যীশুর কাছে নিয়ে এলেন।
যীশু তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুমি যোহনের পুত্র শিমোন। তোমাকে কৈফা বলে ডাকা হবে।” (যার অনূদিত অর্থ, পিতর*)।
ফিলিপ ও নথনেলকে যীশুর আহ্বান
43 পরের দিন যীশু গালীলের উদ্দেশে যাত্রার সিদ্ধান্ত নিলেন। ফিলিপকে দেখতে পেয়ে তিনি বললেন, “আমাকে অনুসরণ করো।”
44 আন্দ্রিয় ও পিতরের মতো ফিলিপও ছিলেন বেথসৈদা নগরের অধিবাসী। 45 ফিলিপ নথনেলকে দেখতে পেয়ে বললেন, “মোশি তার বিধানপুস্তকে ও ভাববাদীরাও যাঁর বিষয়ে লিখেছেন, আমরা তাঁর সন্ধান পেয়েছি। তিনি নাসরতের যীশু, যোষেফের পুত্র।”
46 নথনেল জিজ্ঞাসা করলেন, “নাসরৎ থেকে কি ভালো কিছু আসতে পারে?”
ফিলিপ বললেন, “এসে দেখে যাও।”
47 যীশু নথনেলকে আসতে দেখে তাঁর সম্পর্কে বললেন, “ওই দেখো একজন প্রকৃত ইস্রায়েলী, যার মধ্যে কোনও ছলনা নেই।”
48 নথনেল জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কী করে আমাকে চিনলেন।”
যীশু বললেন, “ফিলিপ তোমাকে ডাকার আগে তুমি যখন ডুমুর গাছের নিচে ছিলে, তখনই আমি তোমাকে দেখেছিলাম।”
49 তখন নথনেল বললেন, “রব্বি, আপনিই ঈশ্বরের পুত্র, আপনিই ইস্রায়েলের রাজা।”
50 যীশু বললেন, “তোমাকে ডুমুর গাছের তলায় দেখেছি একথা বলার জন্য কি তুমি বিশ্বাস করলে! তুমি এর চেয়েও অনেক মহৎ বিষয় দেখতে পাবে।” 51 তিনি আরও বললেন, “আমি তোমাকে সত্যি বলছি, তুমি দেখবে স্বর্গলোক উন্মুক্ত হয়েছে, আর ঈশ্বরের দূতেরা মনুষ্যপুত্রের উপর ওঠানামা করছেন।”
* 1:5 1:5 অথবা, অন্ধকার তাঁকে জয় করতে পারেনি। 1:9 1:9 অথবা, তিনিই ছিলেন প্রকৃত জ্যোতি, যিনি জগতে আগত প্রত্যেক মানুষের উপরে আলো দেন। 1:13 1:13 গ্রিক: রক্তজাত। § 1:14 1:14 অথবা, একমাত্র জাত। * 1:18 1:18 কোনো কোনো পাণ্ডুলিপিতে, একমাত্র বা একজাত পুত্র। 1:19 1:19 লেবীয়েরা হল ইস্রায়েলীদের পিতৃপুরুষ, যাকোবের সন্তান লেবির বংশধর। 1:20 1:20 হিব্রু: মশীহ। খ্রীষ্ট (গ্রিক) ও মশীহ (হিব্রু) দুয়েরই অর্থ, অভিষিক্ত পুরুষ। § 1:23 1:23 যিশাইয় 40:3 * 1:42 1:42 কৈফা কেফাস্ (অরামীয়) ও পিতর, এই উভয়ের অর্থ, পাথর। 1:51 1:51 বা, তোমরা। 1:51 1:51 আদি পুস্তক 28:12