13
অন্তিমলগ্নের চিহ্নাবলি
তিনি যখন মন্দির ছেড়ে যাচ্ছেন, তাঁর শিষ্যদের মধ্যে একজন তাঁকে বললেন, “গুরুমহাশয়, দেখুন! পাথরগুলি কেমন বিশাল!* কেমন অপরূপ সব ভবন!”
উত্তরে যীশু বললেন, “তোমরা কি বিশাল এসব ভবন দেখছ? এদের একটি পাথরও অন্যটির উপরে থাকবে না, সবকটিকেই ভূমিসাৎ করা হবে।”
মন্দিরের বিপরীত দিকে যীশু যখন জলপাই পর্বতে বসেছিলেন, পিতর, যাকোব, যোহন ও আন্দ্রিয় তাঁকে একান্তে জিজ্ঞাসা করলেন, “কখন এই সমস্ত ঘটনা ঘটবে, আমাদের বলুন। আর এগুলি পূর্ণ হওয়ার চিহ্নই বা কী হবে?”
যীশু তাঁদের বললেন, “সতর্ক থেকো, কেউ যেন তোমাদের সঙ্গে প্রতারণা না করে। অনেকে এসে আমার নামে দাবি করবে, ‘আমিই সেই,’ আর এভাবে বহু মানুষকে ঠকাবে। তোমরা যখন যুদ্ধের কথা ও যুদ্ধের সব জনরব শুনবে, তখন আতঙ্কগ্রস্ত হোয়ো না। এ সমস্ত বিষয় অবশ্যই ঘটবে, কিন্তু তখনও অন্তিমলগ্ন উপস্থিত হয়নি। এক জাতি অন্য জাতির বিপক্ষে, এক রাজ্য অন্য রাজ্যের বিপক্ষে অভিযান করবে। বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প হবে ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। কিন্তু এসব প্রসব যন্ত্রণার সূচনা মাত্র।
“তোমরা অবশ্যই নিজেদের সম্পর্কে সতর্ক থাকবে। তোমাদেরকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হবে ও সমাজভবনগুলিতে চাবুক মারা হবে। আমার কারণে তোমাদের বিভিন্ন প্রদেশপাল ও রাজাদের কাছে দাঁড়াতে হবে, তাদের কাছে তোমরা আমার সাক্ষীস্বরূপ হবে। 10 আর প্রথমে সমস্ত জাতির কাছে সুসমাচার প্রচারিত হবে। 11 যখনই তোমাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের জন্য নিয়ে আসা হবে, কী বলবে, তা নিয়ে আগে থেকেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হোয়ো না। সেই সময়ে তোমাদের যা দেওয়া হবে, কেবলমাত্র তাই বোলো, কারণ তোমরা যে কথা বলবে, এমন নয়, কিন্তু পবিত্র আত্মাই বলবেন।
12 “ভাই ভাইকে ও পিতা সন্তানকে প্রতারিত করবে; ছেলেমেয়েরা বাবা-মার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে তাদের মৃত্যুর উদ্দেশে সমর্পণ করবে। 13 আমার কারণে সব মানুষ তোমাদের ঘৃণা করবে, কিন্তু যে কেউ শেষ পর্যন্ত অবিচল থাকবে, সেই পরিত্রাণ পাবে।
14 “যখন তোমরা দেখবে, ‘ধ্বংসের কারণস্বরূপ সেই ঘৃণ্য বস্তু’ যেখানে তার দাঁড়াবার অধিকার নেই, সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে, তখন যারা যিহূদিয়ায় থাকে, তারা পার্বত্য অঞ্চলে পালিয়ে যাক। 15 তখন ছাদের উপরে যে থাকবে, সে যেন কোনো জিনিসপত্র নেওয়ার জন্য নিচে নেমে না আসে, বা ঘরে প্রবেশ না করে। 16 মাঠে যে থাকবে, সে যেন জামাকাপড় নেওয়ার জন্য ঘরে ফিরে না যায়। 17 সেই সময় গর্ভবতী নারীদের ও স্তন্যদাত্রী মায়েদের কতই না ভয়ংকর কষ্ট হবে! 18 প্রার্থনা কোরো, যেন এই ঘটনা শীতকালে না ঘটে। 19 কারণ সেইসব দিনের দুঃসহ যন্ত্রণার কোনও তুলনা হবে না, ঈশ্বরের জগৎ সৃষ্টির সময় থেকে সেরকম কখনও হয়নি, বা আর কখনও হবেও না।
20 “প্রভু যদি সেই সমস্ত দিনের সংখ্যা কমিয়ে না দিতেন, তাহলে কোনো মানুষই রক্ষা পেত না। কিন্তু যাদের তিনি মনোনীত করেছেন ও বেছে নিয়েছেন, তাঁদের জন্য তিনি সেইসব দিনের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন। 21 সেই সময় কেউ যদি তোমাদের বলে, ‘দেখো, খ্রীষ্ট এখানে,’ বা ‘দেখো, তিনি ওখানে,’ সেকথা তোমরা বিশ্বাস কোরো না। 22 কারণ ভণ্ড খ্রীষ্টেরা ও ভণ্ড ভাববাদীরা উপস্থিত হয়ে বহু চিহ্ন ও অলৌকিক কাজ করে দেখাবে, যেন সম্ভব হলে মনোনীতদেরও প্রতারিত করতে পারে। 23 তাই, সতর্ক থেকো, সময়ের আগেই আমি তোমাদের সবকিছু জানালাম।
24 “কিন্তু সেই সমস্ত দিনে, সেই বিপর্যয়ের শেষে,
“ ‘সূর্য অন্ধকারে ঢেকে যাবে,
চাঁদ তার আলো দেবে না;
25 আকাশ থেকে নক্ষত্রসমূহের পতন হবে,
আর জ্যোতিষ্কমণ্ডলী প্রকম্পিত হবে।’§
26 “সেই সময়ে লোকেরা মনুষ্যপুত্রকে মহাপরাক্রমে ও মহিমায় মেঘে করে আসতে দেখবে। 27 তিনি তাঁর দূতদের পাঠাবেন এবং তাঁরা আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত চারদিক থেকে তাঁর মনোনীতদের সংগ্রহ করবেন।
28 “এখন ডুমুর গাছ থেকে এই শিক্ষাগ্রহণ করো: যখনই এর শাখায় কোমল পল্লব ও পাতা বের হয়ে আসে, তোমরা বুঝতে পারো যে, গ্রীষ্মকাল কাছে এসেছে। 29 সেভাবে, তোমরা যখন এসব বিষয় ঘটতে দেখবে, তোমরা জানবে যে, সময় হয়ে এসেছে, এমনকি, তিনি দুয়ারে উপস্থিত হয়েছেন। 30 আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এই সমস্ত ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত বর্তমান প্রজন্ম লুপ্ত হবে না। 31 আকাশ ও পৃথিবী লুপ্ত হবে, কিন্তু আমার বাক্য কখনও লুপ্ত হবে না।
অজানা দিনক্ষণ
32 “কিন্তু সেই দিন বা ক্ষণের কথা কেউই জানে না, এমনকি স্বর্গদূতেরা বা পুত্রও জানেন না, কেবলমাত্র পিতা জানেন। 33 সতর্ক হও! তোমরা সজাগ থেকো! কারণ তোমরা জানো না সেই সময় কখন আসবে। 34 এ যেন কোনো ব্যক্তি বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছেন; তিনি তাঁর বাড়ি ত্যাগ করে তাঁর দাসদের উপরে সমস্ত দায়িত্ব দিলেন। তিনি প্রত্যেককে তার নির্দিষ্ট কাজ দিলেন এবং দ্বাররক্ষীকে সতর্ক পাহারা দিতে বললেন।
35 “সেই কারণে, সজাগ থেকো, কারণ তোমরা জানো না, বাড়ির কর্তা কখন ফিরে আসবেন—সন্ধ্যায়, না মধ্যরাত্রে, মোরগ ডাকার সময়, নাকি সকালবেলায়। 36 তিনি যদি হঠাৎ এসে উপস্থিত হন, তোমাদের যেন ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় দেখতে না পান। 37 আমি তোমাদের যা কিছু বলি, তা সবাইকেই বলি: ‘তোমরা সজাগ থেকো।’ ”
* 13:1 13:1 যোষিফাসের তথ্য অনুযায়ী (অ্যান্টিকিটিস 15; 11; 3) পাথরগুলি ছিল সাদা, তাদের কোনো কোনোটি ছিল 37 ফুট লম্বা, 18 ফুট চওড়া ও 12 ফুট উঁচু। 13:14 13:14 দানিয়েল 9:27; 11:31; 12:11 13:14 13:14 পাঠক এর অর্থ বুঝে নিন § 13:25 13:25 যিশাইয় 13:10; 34:4