4
বীজবপকের রূপক
1 যীশু আবার সাগরের তীরে গিয়ে শিক্ষা দেওয়া শুরু করলেন। সেখানে তাঁর চারপাশে এত লোক এসে ভিড় করল যে, তিনি সাগরের উপরে একটি নৌকায় উঠলেন ও তার উপরে বসলেন, লোকেরা রইল সাগরের তীরে, জলের কিনারায়।
2 তিনি রূপকের মাধ্যমে বহু বিষয়ে তাদের শিক্ষা দিলেন। তাঁর উপদেশে তিনি বললেন,
3 “শোনো! একজন কৃষক তার বীজবপন করতে গেল।
4 সে যখন বীজ ছড়াচ্ছিল, কিছু বীজ পথের ধারে পড়ল। আর পাখিরা এসে তা খেয়ে ফেলল।
5 কিছু বীজ পাথুরে জমিতে পড়ল, যেখানে মাটি গভীর ছিল না। মাটি অগভীর থাকাতে সেগুলো দ্রুত অঙ্কুরিত হল।
6 কিন্তু যখন সূর্য উঠল চারাগুলি ঝলসে গেল এবং মূল না থাকাতে সেগুলি শুকিয়ে গেল।
7 অন্য কিছু বীজ পড়ল কাঁটাঝোপের মধ্যে। সেগুলি বৃদ্ধি পেলে কাঁটাঝোপ তাদের চেপে রাখল, ফলে সেগুলিতে কোনও দানা হল না।
8 আরও কিছু বীজ পড়ল উৎকৃষ্ট জমিতে। সেগুলির অঙ্কুরোদ্গম হল, বৃদ্ধি পেল এবং ত্রিশগুণ, ষাটগুণ, এমনকি, শতগুণ পর্যন্ত শস্য উৎপন্ন হল।”
9 এরপর যীশু বললেন, “যার শোনবার মতো কান আছে, সে শুনুক।”
10 যীশু যখন একা ছিলেন, তখন সেই বারোজনের সঙ্গে তাঁর চারপাশে থাকা মানুষেরা এই রূপকটি সম্বন্ধে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন।
11 তিনি তাদের বললেন, “ঈশ্বরের রাজ্যের নিগুঢ়তত্ত্বগুলি তোমাদের জানতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যারা বাইরের মানুষ, তাদের কাছে সবকিছুই রূপকের আশ্রয়ে বলা হবে,
12 যেন,
“ ‘তারা ক্রমেই দেখে যায়,
কিন্তু কিছুই বুঝতে পারে না,
আর সবসময় শুনতে থাকে,
কিন্তু কখনও উপলব্ধি করে না,
অন্যথায় তারা হয়তো ফিরে আসত ও পাপের ক্ষমা লাভ করত।’ ”
13 তারপর যীশু তাদের বললেন, “তোমরা কি এই রূপকটি বুঝতে পারছ না? তাহলে অন্য কোনো রূপক তোমরা কীভাবে বুঝবে?
14 কৃষক বাক্য-বীজ বপন করে।
15 কিছু মানুষ পথের ধারে থাকা লোকের মতো, যেখানে বীজবপন করা হয়েছিল। তারা তা শোনামাত্র, শয়তান এসে তাদের মধ্যে বপন করা বাক্য হরণ করে নেয়।
16 অন্য কিছু লোক পাথুরে জমিতে ছড়ানো বীজের মতো। তারা বাক্য শুনে তক্ষুনি তা আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করে।
17 কিন্তু যেহেতু সেগুলির মধ্যে শিকড় নেই, সেগুলি ক্ষণস্থায়ী হয়। বাক্যের কারণে যখন কষ্টসমস্যা বা নির্যাতন ঘটে, তারা দ্রুত পতিত হয়।
18 আরও কিছু লোক, কাঁটাঝোপে ছড়ানো বীজের মতো। তারা বাক্য শ্রবণ করে,
19 কিন্তু এই জীবনের বিভিন্ন দুশ্চিন্তা, ধনসম্পত্তি, ছলনা ও অন্য সব বিষয়ের কামনাবাসনা এসে উপস্থিত হলে, তা সেই বাক্যকে চেপে রাখে, ফলে তা ফলহীন হয়।
20 আর, যারা উৎকৃষ্ট জমিতে বপন করা বীজের মতো, তারা বাক্য শুনে তা গ্রহণ করে এবং যা বপন করা হয়েছিল, তার ত্রিশগুণ, ষাটগুণ, এমনকি, শতগুণ পর্যন্ত ফল উৎপন্ন করে।”
দীপাধারের উপরে প্রদীপ
21 তিনি তাদের বললেন, “তোমরা কি কোনো প্রদীপ এনে, তা কোনও গামলা বা খাটের নিচে রাখো? বরং তোমরা কি তা বাতিদানের উপরেই রাখো না?
22 এতে যা কিছু গুপ্ত থাকে, তা প্রকাশ পায় এবং যা কিছু লুকোনো থাকে, তা প্রকাশ্যে নিয়ে আসা হয়।
23 যদি কারও শোনবার মতো কান থাকে, সে শুনুক।”
24 তিনি বলে চললেন, “তোমরা যা শুনছ, তা সতর্কভাবে বিবেচনা করে দেখো। যে মানদণ্ডে তোমরা পরিমাপ করবে, সেই একই মানদণ্ডে, কিংবা আরও কঠোর মানদণ্ডে তোমাদের পরিমাপ করা হবে।
25 যার আছে, তাকে আরও বেশি দেওয়া হবে, যার নেই, তার যেটুকু আছে, তাও তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে।”
অঙ্কুরিত বীজের রূপক
26 তিনি আরও বললেন, “ঈশ্বরের রাজ্য এরকম। কোনো ব্যক্তি জমিতে বীজ ছড়ায়।
27 দিনরাত সে জেগে বা ঘুমিয়ে কাটালেও, বীজের অঙ্কুরোদ্গম হয় ও তা বেড়ে ওঠে। অথচ, কেমন করে তা হল, তার সে কিছুই বুঝতে পারে না।
28 মাটি নিজে থেকেই শস্য উৎপন্ন করে—প্রথমে অঙ্কুর, পরে শিষ, তারপর শিষের মধ্যে পরিণত দানা।
29 দানা পরিপক্ব হলে, সে তক্ষুনি তাতে কাস্তে চালায়, কারণ শস্য কাটার সময় উপস্থিত হয়েছে।”
সর্ষে বীজের রূপক
30 তিনি আবার বললেন, “আমরা কী বলব, ঈশ্বরের রাজ্য কীসের মতো? অথবা তা বর্ণনা করার জন্য আমরা কোন রূপক ব্যবহার করব?
31 এ যেন এক সর্ষে বীজের মতো; তোমরা যতরকম বীজ জমিতে বোনো, তা সেগুলির মধ্যে ক্ষুদ্রতম।
32 তবুও বোনা হলে তা বৃদ্ধি পায় ও বাগানের অন্য সব গাছপালা থেকে বড়ো হয়ে ওঠে। এর শাখাগুলি এত বিশাল হয় যে, আকাশের পাখিরা এসে এর ছায়ায় বাসা বাঁধতে পারে।”
33 এ ধরনের আরও অনেক রূপকের মাধ্যমে, যীশু তাদের বুঝবার সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের কাছে বাক্য প্রচার করলেন।
34 রূপক ব্যবহার না করে তিনি তাদের কাছে কোনো কথাই বললেন না। কিন্তু তিনি তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে একান্তে থাকার সময়, তাঁদের কাছে সবকিছুই ব্যাখ্যা করতেন।
যীশু ঝড় শান্ত করলেন
35 সেদিন সন্ধ্যা হলে যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “চলো আমরা ওপারে যাই।”
36 সকলকে পিছনে রেখে, যীশু যেভাবে নৌকায় ছিলেন, সেভাবেই তাঁকে নিয়ে শিষ্যেরা নৌকায় যাত্রা করলেন। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকটি নৌকা ছিল।
37 ভয়ংকর এক ঝড় এসে উপস্থিত হল। ঢেউ নৌকার উপরে এমনভাবে আছড়ে পড়তে লাগল যে, নৌকা প্রায় জলে পূর্ণ হতে লাগল।
38 যীশু নৌকার পিছন দিকে একটি বালিশে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলেন। শিষ্যেরা তাঁকে জাগিয়ে তুলে বললেন, “গুরুমহাশয়, আমরা ডুবে যাচ্ছি, আপনার কি কোনও চিন্তা নেই?”
39 তিনি উঠে ঝড়কে থেমে যাওয়ার আদেশ দিলেন ও ঢেউগুলিকে বললেন, “শান্ত হও! স্থির হও!” তখন ঝড় থেমে গেল ও সবকিছু সম্পূর্ণ শান্ত হল।
40 তিনি তাঁর শিষ্যদের বললেন, “তোমরা এত ভয় পেলে কেন? তোমাদের কি এখনও কোনো বিশ্বাস নেই?”
41 আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলেন, “ইনি তাহলে কে? ঝড় ও ঢেউ যে এঁর আদেশ পালন করে!”